Islamic History

তাবলীগ জামাতের বিভক্তির কারণ কি?

তাবলীগ জামায়াত একটি সংগঠন এবং আন্দোলনের নাম তাবলীগ জামাতকে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে সেরা প্রভাবশালী ইসলামী আন্দোলন হিসেবে বিবেচনা করা হয় বিশ্বকাপে ইসলামের বার্তা প্রচার করা এবং মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা এই সংগঠনের প্রধান কাজ।

মুসলমানদের ভেতরেই সবচেয়ে বেশি ইসলামের দাওয়াত প্রচার করে কারণ তারা মনে করে মুসলমানদেরকেই আগে প্রকৃত ইসলামের চর্চা করতে হবে। সদস্যরা নিজেদেরকে এবং মুসলিমদের জীবনে এমন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চান যেমন ইসলাম সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম রেখে গিয়েছিলেন । বর্তমানে পৃথিবীর ১৮০ থেকে প্রায় ২০০ টি দেশে আনুমানিক এক কোটি ২০ লক্ষ থেকে প্রায় ৮ কোটি লোক তাবলীগ জামাতের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাবলীগ জামাতের সদস্যদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। যার ফলে ইসলামের মৌলিক বিধান পালন করা শান্তিপ্রিয় এই গোষ্ঠীর মধ্যেও বেশকিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচারের জন্য নন্দিত সংগঠন তাবলীগ জামাত কিভাবে দুই পক্ষের বিভক্ত হয়ে পড়ল সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। ১৯২৬ সালে ভারতের মাওয়াতে মাওলানা মোঃ ইলিয়াস কামদুল ওভী তাবলীগ জামাতের সূচনা করেছিলেন তৎকালীন সময় মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী নীতি ও আদর্শের ঘাট তি দেখতে পেয়ে তিনি তাবলীগ জামাত নামের সংস্কারবাদী আন্দোলনের যাত্রা করেন। ১৯২০ এর দশক থেকে তিনি তাবলীগ আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধ প্রচার করে মুসলিমদের নামাজ রোজা সহ অন্যান্য ইবাদতের পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন।

মুসলিমদের আধ্যাত্মিক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে তাবলীগ জামাতের মূল ভিত্তি হিসেবে ছয়টি উসুল বা মূল নীতি গ্রহণ করা হয়। বিষয়গুলো হলো কালিমা নামাজ এর ও জেকের একরামুল মুসলিমীন বা মুসলমানদের সহায়তা করা এ ক্লাসের নিহত বা সহি নিয়ত এবং দাওয়াত ও তাবলীগ অর্থাৎ অর্থাৎ ধর্ম প্রচারের আহ্বান।

এই মূল বিষয়গুলো পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি চরিত্র সংশোধন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই তাবলীগের মূল উদ্দেশ্য । তাবলীগের সদর দপ্তর ভারতের দিল্লির নিজামুদ্দিনে অবস্থিত একে বলা হয় আলমি মারকাজ অর্থাৎ বৈশ্বিক কেন্বৈশ্বিক । এখান থেকেই সারা বিশ্বে ইসলাম প্রচারের কাজ পরিচালিত হয়। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ইসলাম শেখার জন্য নিজামুদ্দিন মারকাজে আসেন। বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের কেন্দ্র হল ঢাকার কাকরাইল মারকাজ মসজিদ।

তাবলীগে আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মোঃ ইলিয়াস আন্দোলন ওভী তাবলীগ জামাতের প্রথম আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তার মৃত্যুর পর মোহাম্মদ ইউসুফ তাবলীগ আন্দোলনে নিযুক্ত হন । তারপর এনামুল হাসান তৃতীয় আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । এনামুল হাসানের মৃত্যুর পর থেকে ই শুরু হয়েছিল । আমির মাওলানা এনামুল হাসান ইন্তেকালের দুই বছর আগে ১৯৯৩ সালে তাবলীগের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি মজলিসে সুরা গঠন করেছিলেন। এই সুরা কমিটিতে ভারতের নিজামুদ্দিনের পাঁচজন পাকিস্তানের চারজন এবং বাংলাদেশের একজন সদস্য ছিলেন । সবার ছোট ছিলেন মাওলানা সাদ । অন্যান্য মুরব্বিরা বেশ বয়স্ক হওয়ার কারণে মাওলানা সাদ একাই বেশ কিছু দায় দায়িত্ব পালনের সুযোগ লাভ করেন। সদস্যরা পর্যায়ক্রমে ইন্তেকাল করতে থাকেন কিন্তু তাদের ইন্তেকালের পর মাওলানা সাদ নতুন কোন সূরা সদস্য নিয়োগ করতে দেননি।

২০১৫ সালে পাকিস্তানের লাহোরের রায় ব্যান্ডে ইজতেমা চলার সময় ১৩ সদস্য বিশিষ্ট আলমে সুরা বা বৈশ্বিক পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সুপারিশ করা হয় কিন্তু তিনি গঠন করতে দেননি পরবর্তীতে এক সময় তিনি নিজেকে সারা বিশ্বের তাবলীগ জামাতের আমির হিসেবে ঘোষণা দেন তিনি তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানার ইলিয়াস এর নাতি। প্রথম দিকে তেমন কোনো আপত্তি আসেনি কিন্তু ২০১৬ সালে তাবলীগের মূল কেন্দ্র নিজামুদ্দিন মারকাজে আলমে সুরা গঠনের বিষয়টি নিয়ে সর্বপ্রথম দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এরপর সমস্যা আরও জটিল হতে থাকে যখন ৭ গান্ডৌলবি বিতর্কিত বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় কুরআন হাদিস ইসলাম নবী রাসূল ও নবুওয়াত এবং মাসলা মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। মাওলানা সাদ এর বিরুদ্ধে কোরআন সুন্নাহর ভুল বিশ্লেষণ করার অভিযোগ এনে তাবলীগ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেন। মাওলানা সাবের বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য ওলামায়ে দেওবন্দসহ বিশ্বের আলেম-ওলামারা অনুরোধ করতে থাকেন। এর ফলশ্রুতিতে তিনি বারবার তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেও আবারও সেই আগের বয়ানগুলো চালিয়ে যেতে থাকেন। এবং আলেম-ওলামারা মাওলানা সাদ এর ইসলামের শরীয়ত থেকে ছিটকে পড়া এবং তাবলীগ জামাতের ফেতনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করতে থাকেন।

এক এবং অপরদিকে আলেম-ওলামাদের পক্ষে অবলম্বন করে আলমি নাম ধারণ করে তাবলীগ জামাতের দুটি পক্ষ দাঁড়িয়ে যায় না হওয়া পর্যন্ত বর্তমানে দুই পক্ষই প্রতিপক্ষের সমর্থন আদায় না হওয়া পর্যন্ত একে অপরকে বয়কট করার ঘোষণা দিয়েছে।

মাওলানা মাওলানা সাদ বলেছিলেন মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায় না দিনের এমন শাখা যেখানে শুধু দিনই পড়ানো হয় যদি তার সম্পর্ক মসজিদের সাথে না থাকে তাহলে খোদার কসম সেখানেও দিন থাকবে না। হয়তো সেখানে দিনের তালিম হবে কিন্তু দিন হবে না এখানে তিনি মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া বোঝেন নি হলো দিনের কথা বলার সুন্নতের পরিপন্থী এবং তা আম্বিয়া ও সাহাবীদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক । আরো বলেন বেতন নিয়ে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার অর্থ দিন বিক্রি করা। ব্যভিচারী লোকেরা অভিসকল লোকের আগে জান্নাতে যাবে যারা কুরআন শিক্ষা দিয়ে বেতন নেয়। এছাড়া তিনি এমন একটি বয়ান করেছিলেন যেখানে মুসা আলাইহিস সালামের কাজের সমালোচনা করা হয়। মাওলানা সাদ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি মুসা আলাই সালাম কে দ্বীনের দাওয়াত ত্যাগ করার অপবাদ দিয়ে অসম্মানিত করেছেন। এছাড়া মাওলানা সাদ আরো বলেছেন আমার মতে ক্যামেরা বিশিষ্ট মোবাইল পকেটে রেখে নামাজ হয় না তোমরা আলেমদের কাছে যত জিজ্ঞেস করো তোমরা আলেমদের কাছে যত জিজ্ঞেস করো যত ফতোয়া নাও ক্যামেরা বিশিষ্ট মোবাইল দিয়ে কুরআন শোনা ও পড়া কোরআনকে অপমাননা করা । এতে গুনাহ হবে । কোন সওয়াব হবে না।

যেসব আলেম এগুলো ফতোয়া দেয় তারা হচ্ছে ভন্ড বা পথভ্রষ্ট পথভ্রষ্ট আলেম। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সাথে অন্য কোন আলেমের মতপার্থক্য হলেই উক্ত আলেমকে উলামায়ে সুয়াখ্যা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মাওলানা সাদ এর বিরুদ্ধে মাওলানা সাদ আরও বলেছেন পড়া প্রত্যেকটি মুমিনদের ওয়াজিব যে ব্যক্তিটা পরিত্যাগ করবে তার ওয়াজিব ত্যাগ করার গুনাহ হবে ।

মাওলানা সাদ
মাওলানা সাদ

যদিও পরবর্তীতে তিনি ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি প্রত্যাহার করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তাবলীগের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে নিজের মনগড়া কথাবার্তা বলার অভিযোগ রয়েছে মাওলানা সাদ এর বিরুদ্ধে। কোন কোন আলেম মাওলানা সাদ এর বয়ানের সাথে একমত না হলে তাদেরকে তাবলীগ বিরোধী তকমা দেওয়ারও অনুরোধ রয়েছে। মাওলানা মোহাম্মদ সাদ এর বিতর্কিত বেশ কিছু বয়ানের অডিও ভাইরাল হতে শুরু করে সাধারণ লোকজন মাওলানা সাদ এর উদ্ধৃতি দিয়ে সেই সব বিতর্কিত কথাবার্তা ব্যাপক হারে প্রচার করতে থাকেন। তখন বিতর্কিত বক্তব্য গুলো সংশোধন এবং আলেম-ওলামাদের সাথে তাবলীগের মতবিরোধ এড়ানোর জন্য দারুল উলুম দেওবন্দের পক্ষ থেকে আলোচনা চালানোর চেষ্টা করা হয় নি তেমন কোন লাভ হয়নি। এক পর্যায়ে দেশ-বিদেশের হকপন্থী ওলামায়ে কেরাম দারুল উলুম দেওবন্দের পরিষ্কার অবস্থান জানতে চাই। এর ফলে উপমহাদেশের প্রখ্যাত দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে মাওলানা সাদ সাহেবের গোমরাহীর বিষয়ে ফতোয়া জান করা হয়।

দারুল উলুম দেওবন্দের ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত অবস্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। দেয় বন্দর সেই ফতোয়ায় বলা হয়েছিল তাবলীগ জামাতের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সঙ্গে এই ফতোয়ার কোন ধরনের সম্পর্ক নেই । তারা শুধু মাওলানা সাদ সাহেবের আপত্তিকর ধারণা এবং বক্তব্যগুলোকে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দেওবন্দের প্রতি অভিযোগ তোলা হয়েছে যে তারা তাবলীগের বিবাদমান দুটি পক্ষের মধ্যে একটি পক্ষকে সমর্থন জোগাতেই মাওলানা সাদ এর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছে। তাবলীগ জামাত শুরু থেকেই দেওবন্দী আন্দোলনের একটি শাখা হিসেবে বিবেচিত হতো। তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস নিজেও দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্র ছিলেন তিনি মূল ত দেওবন্দী আন্দোলনের গুরুত্ব দিয়ে তাবলীগ জামাত শুরু করেছিলেন । অতীতে তাবলীগের সকল আমের সহ মুরুব্বীরা দারুল উলুম দেওবন্দের ফয়সালার উপরে কোন ধরনের কথা বলত না। বরং তারা তাবলীগের বিভিন্ন বিষয়ে এবং বড় বড় অনুষ্ঠানে দেওবন্দী আলেমদেরকে বিশেষ প্রাধান্য দিতেন। কিন্তু মৌলানা সাদ কেন্দ্র নবীর সাথে দারুল উলুম দেওবন্দের এই দ্বন্দ্ব তাবলীগের ইতিহাসের সম্পূর্ণ বিপরীত এগিয়ে চলেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার এবং ইসলামকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে দারুল উলুম দেওবন্দের ভূমিকা অপরিসীম শুধু তাই নয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা। ইসলামি বিষয়ে দেওয়ান মাদ্রাসা ও দেওবন্দী আলেমদের বেশ প্রভাব রয়েছে ইসলামিক শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন এবং আমাদের ওয়েবসাইটটি শেয়ার করে অন্যদের মাঝে প্রচার করুন।

দাওয়াত ও তাবলীগ আল কাউসার
মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলাম
তাবলীগের হেদায়েতের বয়ান
সাদ গ্রুপ
ইজতেমা
এতাআতি

শেষ কথা

আমরা এ ধরনের ইতিহাস গুলি আমাদের এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করি আশা করি সকল ধরনের ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব এর বিভিন্ন ভিডিওর মাধ্যমে তথ্য নেওয়ার পর সঠিক তথ্যটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে পেরেছি । সামান্য কিছু ভুল ত্রুটি হলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন । আমাদের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত দেখার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ এবং পরবর্তী পোস্ট দেখার আমন্ত্রণ রইল আজকে এ পর্যন্ত ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ ।

InformerBD.Com

InformerBD.Com Deals with all kinds of topics. Variety of Educational, Agriculture, Technology, Entertainment, Quiz Results, Bizarre Results. We help with all kinds of information. Contact us to get the latest information.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button